রাজশাহী

৯ দিন অনশন করেও প্রেমিককে পেলেন না তরুণী

প্রেমিককে জীবনের বন্ধনে বাঁধতে নয় দিন ধরে অনশন করেও সফল হতে পারলেন না প্রেমিকা। প্রেমিক অন্য মেয়েকে সিঁদুর পরিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে অনশনরত ওই কলেজছাত্রীকে তার বড় ভাই প্রেমিক হিমেলের বাড়ি থেকে নিয়ে যান। প্রেমিকের বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তরুণীকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়।
জানা যায়, হিমেল রায়ের সঙ্গে ২০১৭ সালে প্রেমের সম্পর্ক হয় এই কলেজছাত্রীর। হিমেল রায় দেবীগঞ্জ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ উমাপতি রায়ের বড় ছেলে। তিনি বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। পাশের এলাকার বাসিন্দা ওই তরুণী। প্রেমিককে একাধিকবার বিয়ের চাপ দিলে হিমেল তা বিভিন্ন কৌশলে এড়িয়ে যায়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি হিমেলকে তার পরিবার অন্যত্র বিয়ে করাচ্ছে এমন খবর পেয়ে প্রেমিকের বাড়িতে ছুটে যান এই তরুণী। বিয়ের দাবি জানান। কিন্তু ছেলের পরিবার না মানলে শুরু করেন অনশন। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এ ঘটনার মধ্যেই প্রেমিক হিমেলকে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছেন তার পরিবার। বিয়ের কিছু ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যান মেয়ের পরিবার। আশ্চর্য হন স্থানীরাও। পরে অনশনের দশ দিনের মাথায় তরুণীর বড় ভাই তার বোনকে সেখান থেকে বাসায় নিয়ে গেছেন।
অনশনকালে ভুক্তভোগী তরুণী সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, হিমেলের সঙ্গে আমার ছয় বছরের প্রেমের সম্পর্ক। এ সময়ের মধ্যে অনেক কিছু হয়েছে। হঠাৎ হিমেলের অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার কথা শুনে তার বাড়িতে ছুটে আসি। তার পরিবারকে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের কথা জানালে তারা না মেনে আমাকে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে। অথচ চলতি মাসেই দিনাজপুর জজকোর্টে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে আমরা দুজনই বিয়েতে আবদ্ধ হওয়ার জন্য অঙ্গীকারনামা সম্পন্ন করি।
ভুক্তভোগীর বড় ভাই বলেন, আমার বোন অনেক দিন ধরেই এখানে আছে। প্রায় দশ দিন হলো। ন্যায়বিচারের আশায় এখানে এসেছিল। হিমেলকে ভালোবাসত। কিন্তু হিমেলের বাবা দেবীগঞ্জের প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছেন। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। ছেলের পরিবার বিষয়টিকে টাকার মাধ্যমে মিটমাট করতে চেয়েছিল। আমরা গরিব হতে পারি, কিন্তু আমাদের কিছুটা হলেও আত্মসম্মান রয়েছে। তাই টাকার কাছে বোনের সম্মান বিক্রি করে দিতে পারি না। সে কারণে আমার বোনকে এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে এখানে আমার বোনকে টর্চার করা হচ্ছিল। এছাড়া এ ঘটনায় আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আ স ম নুরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি সমাধান করতে আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু উমাপতি রায় মেয়েটিকে মেনে নেননি। এছাড়া তার বাবা অসুস্থ। তাই তাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়াই উত্তম। তার জীবনের মূল্য রয়েছে। বড় কোনো ক্ষতি হলে এর মূল্য কে দেবে।
দেবীগঞ্জ পৌর মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। বিষয়টি আমরা মীমাংসা করতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছিল না। আর ছেলের বাবাও মেনে নিচ্ছিলেন না। তাই গতকাল মেয়ের পরিবার তাকে সেখান থেকে নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে উমাপতি রায় বলেন, মেয়েটি আমার ছাত্রী। মূলত আমার ছেলেকে ২০২১ সালে বিয়ে করিয়েছি। সেখানে এ মেয়েটির দাবি কীভাবে মেনে নিতে পারি। তাই সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি অন্য কোনোভাবে সমাধান করার চেষ্টা করেছি কিন্তু মেয়ের পরিবার রাজি হয়নি। তাকে আমি আমার বাসায় মেয়ের মতো থাকতে দিয়েছি। তার কোনো অযত্ন করা হয়নি। মেয়ে হিসেবে তার জন্য আমার ঘরের দরজা সবসময় খোলা রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button