অপরাধআইন ও বিচারজেলা সংবাদঢাকাসারাদেশ

যৌতুকের বলি অন্তঃসত্ত্বা মিম, বিচার চেয়ে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারায় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতনের মাধ্যমে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ মোছা. মিম আক্তার (২০) কে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে শুক্রবার (১২ মে) সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে নিহতের পরিবার।

সকালে উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের মুড়িকান্দি গ্রামে নিহত গৃহবধূ মিম আক্তারের বাবার বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন শেষে গ্রামের সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নিহত নিহত গৃহবধূ মিম আক্তারের দিনমজুর বাবা রোকন উদ্দিন, মা মাকসুদা আক্তার, দাদা হাজী মো. সামছুদ্দিন, চাচা মো. দুলাল খলিফা, চাচা এহসানুল হক ফারুক, চাচা তোফাজ্জল হোসেন গেন্দু ও ফুফু আঙ্গুরা খাতুন।

তারা জানান, উপজেলার পার্শ্ববর্তী সুতারপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ গণেশপুর চামটা গ্রামের আবুবাক্কারের ছেলে ডেকোরেটর কর্মী মো. রিয়াজ মিয়ার সাথে মিম আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠলে দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়।
বিয়ের এক বছর পর স্ত্রী মিম আক্তারের কাছে যৌতুক হিসেবে এক ভরি স্বর্ণ, মোটর সাইকেল ও ফার্নিচার দাবি করে রিয়াজ মিয়া (২৬)। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ ও নির্যাতনের শিকার হলে মিম বাবার বাড়ি মুড়িকান্দি গ্রামে চলে যায়।
মাসখানেক পর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে রিয়াজের বাবা আবুবাক্কার ও তার স্ত্রী রিনা আক্তার সেখানে গিয়ে পরিবারের লোকদের আশ্বস্ত করে মিমকে স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যায়।
কিন্তু দুই-আড়াই মাস পর যৌতুকের জন্য মিমের উপর আবার অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়। এক পর্যায়ে স্বামী রিয়াজ, ভাসুর জিকু মিয়া, শাশুড়ি রিনা আক্তার এবং দুই ননাশ আনোয়ারা ও চায়না আক্তার মিলে মিমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে।
মিম যৌতুক এনে দিতে অপারগতা জানালে তার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়তে থাকে। এ রকম পরিস্থিতিতে পাঁচ মাস আগে মিম অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এরপরও তার উপর যৌতুকের জন্য অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ হয়নি।

সম্প্রতি মিমের মা মাকসুদা আক্তার তার ছোট ভগ্নিপতির কাছ থেকে একটি স্মার্ট ফোন উপহার পেলে সেটি এনে দেওয়ার জন্য মিমকে তার স্বামী রিয়াজ চাপ দেয়। এ নিয়ে নতুন করে আবারও নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে মিমের উপর।

এরকম পরিস্থিতিতে গত ৬ মে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন স্বামী রিয়াজের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তারা ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় খাটের ওপর মিমের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

নিহত মিমের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, যৌতুকের জন্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতনের মাধ্যমে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মিম আক্তারকে হত্যার পর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ঘাতকেরা পরিকল্পনা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। তারা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মিম হত্যার বিচার দাবি করেছেন৷
এদিকে সংবাদ সম্মেলন শেষে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে পরিবার ও স্বজনেরা ছাড়াও এলাকার প্রায় কয়েকশ’ নারী-পুরুষ অংশ নেন। মানববন্ধনে নিহত মিম আক্তারের দুই বোন জোনাকী ও নওরিন বোন হত্যার বিচার চেয়ে কান্না কন্ঠে বলেন যেন এই হত্যা কান্ডের সুন্ঠ বিচার হয়৷
এলাকাবাসী এ সময় অবিলম্বে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button