“মোটরসাইকেলের জন্যেই দীপ্তকে হত্যা করা হয়” -পিবিআই
নড়াইলে কলেজছাত্র হত্যার ঘটনায় তিন আসামীকে গ্রেফতার করেছে যশোর জেলা পিবিআই।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন-নড়াইল সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের শিশির সরকারের ছেলে সুমন সরকার (৩০), সরোজিত বিশ্বাসের ছেলে সজীব কুমার বিশ্বাস (২২), গৌতম রায়ের ছেলে, আকাশ রায় (২১)।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে সদরের গোপালপুর গ্রাম থেকে তাদের গ্রেফতার করে পিবিআই।
এসময় দীপ্তর ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও উদ্ধার করে পুলিশ। চোরাই মোটরসাইকেল রাখার অপরাধে নড়াগাতি থানার যোগানিয়া গ্রামের মৃত মিরাজ শেখের ছেলে মো. সাদ্দাম হোসেন বদির (৩২) নামে আরো একজন কে গ্রেফতার করে নড়াইল জেলা পুলিশ।
এ বিষয়ে পিবিআই যশোরের পরিদর্শক শামীম মুসা জানান, ঘটনার পর দীপ্তর বাবা বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন। আসামীদের গ্রেফতার করে রোববার দুপুরে নড়াইল আদালতে সোপর্দ করা হয়। অভিযুক্তরা বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এছাড়া পলাতক আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারী) রাতে যশোর পুলিশ ব্যুরো অফ ইনবেস্টিকেশন (পিবিআই) এর পরিদর্শক শামিম মুসা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামী সুমন সরকার, সজীব কুমার বিশ্বাস, আকাশ রায় ও ভিকটিম দীপ্ত সকলেই মাদকাসক্ত। তারা একসাথে বসেই মাদক সেবন করতো। আসামী সুমন সরকার, সজীব কুমার বিশ্বাস ও আকাশ রায়’দের টাকা প্রয়োজন হলে তারা দীপ্তকে হত্যা করে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
তিনি আরো জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা দীপ্তকে মোবাইল করে ঘটনাস্থলে আসতে বলে। দীপ্ত ঘটনাস্থলে আসলে তারা তাকে গাঁজা সেবনের উদ্দেশ্যে গাঁজা বানাতে দেয়। দীপ্ত গাঁজার মসলা বানাতে ব্যস্ত থাকাকালে আকাশ ও সজীব দীপ্তর গলায় পেছন থেকে নাইলোনের দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে দড়ির এক প্রান্তে আকাশ ও অপর প্রান্তে সজীব টেনে শ্বাসরোধ করে দীপ্তকে হত্যা করে।
পরে মৃত দীপ্তর পকেট থেকে মোটরসাইকেলের চাবি বের করে নিয়ে ঘটনাস্থলের পাশে থাকা পুকুরে তার মৃতদেহ ফেলে দেয়। এরপর আসামী আকাশ ও সজীব সুমনকে ফোন করে জানায়,তারা দীপ্তকে মেরে ফেলেছে, তার মোটরসাইকেলে তেল নেই। তেল কেনার জন্য টাকার প্রয়োজন। সুমন টাকার ব্যবস্থা করছি বলে ফোন কেটে দেয়।
সজীব ও আকাশ দীপ্তর মোটরসাইকেল নিয়ে বারইপাড়া খেয়াঘাট পার হয়ে কালিয়া বাজার থেকে মোটরসাইকেলে ৫০ টাকার তেল ভরে অপর পলাতক আসামি নড়াগাতি থানার যোগানিয়া গ্রামের হাবিব শেখের ছেলে সজীব (পলাতক) এর নিকট মোটরসাইকেল বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে রেখে আসে।
এরপর সজিব বিশ্বাস ও আকাশ ভিকটিমের মোটরসাইকেলটি আসামী মো. সাদ্দাম হোসেন বদির এর কাছে রয়েছে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে। নড়াইল জেলা পুলিশ তার কাছ থেকে দীপ্তর মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে এবং চোরাই মোটরসাইকেল রাখার অপরাধে তাকে গ্রেফতার করে।
উল্লেখ্য, নড়াইল সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের হোগলা ডাঙ্গা গ্রামের দ্বীনো সাহার ছেলে ও নড়াইল সিটি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী দীপ্ত সাহা (২২) নির্মম ভাবে খুন হন।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে হোগলা ডাঙ্গা এলাকায় নামযজ্ঞের মেলায় দেখার উদ্দেশে নিজের ব্যবহৃত অ্যাপাসি ৪ ভি মোটরসাইকেলটি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন দ্বীপ্ত। রাত হয়ে গেলে ও সে আর বাড়িতে না ফেরায় দীপ্তর বাবা অনুমান করেন হয়ত কোনো বন্ধু বা বোনের বাড়িতে গেছে সে।
পরদিন শনিবার বেলা ১১টার দিকে দীপ্তর বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে উত্তম নামের একজন তার মাছের ঘেরে কাজে গিয়ে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে হাত-পা বাধা অবস্থায় ঘেরের কিনারা থেকে কলেজ ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে। তবে এসময় তার মোটরসাইকেলটি পাওয়া যায়নি।