সৃজনশীল

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি কবি শামসুর রহমানের ‘নিজ বাসভূমে’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি মূলত ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসকদের জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালির বিদ্রোহী চেতনার দলিলস্বরূপ। সেসময় পাকিস্তানের অন্যায়ের বিরুদ্ধে এদেশের সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠেছিল। প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার, কল-কারখানা, স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসংখ্য ছাত্র-জনতা ঢাকার রাজপথে জড়ো হয়েছিল।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
বিচিত্র শ্রেণি পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার এক অসাধারণ চিত্র ফুটে উঠেছে এ কবিতাটিতে। দেশকে ভালোবেসে মানুষের আত্মদান ও আত্মাহুতির বিষয়টি এখানে ফুটে উঠেছে। মানুষের এই চেতনা যে ঐতিহ্যগত সে বিষয়টি বোঝাতে ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে কবিতায় মূর্ত করা হয়েছে।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর 

আপনি যদি ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার মূলভাব জেনে থাকেন থাকলে এবার আপনাকে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর জানতে হবে। আজকের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল টি পড়ার পর জানতে পারবেন ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত অথবা ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতায় বর্ণমালাকে কিসের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য খুবই জরুরি। ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতায় কৃষ্ণচূড়া কিসের প্রতীক জানার মাধ্যমে জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।

সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০১

পত্রিকার পাতা খুলে প্রতিদিনের মতো আমজাদ সাহেব শিরোনামগুলোতে চোখ বুলাচ্ছিলেন । তার চোখে পড়ল তিনটি অপহরণ আর পাঁচটি হত্যার সংবাদ শিরোনাম। হঠাৎ তার মনে হলো, পুরো দেশে অন্ধকার নেমে এসেছে। ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেই অন্ধকারে যেন ম্লান হয়ে যাচ্ছে

ক. সারা দেশ কাদের অশুভ আস্তানা?

খ. কবি কেন কৃষ্ণচূড়া ফুলের প্রসঙ্গ এনেছেন?

গ. উদ্দীপকে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? আলোচনা করো।

ঘ. ‘ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেই অন্ধকারে ম্লান হয়ে যাচ্ছে’— ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার আলোকে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০১ এর উত্তর সমূহ

ক. সারা দেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা ।

খ. আমাদের চেতনার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে কবি কৃষ্ণচূড়া ফুলের প্রসঙ্গ এনেছেন ।

প্রতিবছর শহরের পথে পথে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে। কবির মনে হয়, যেন ভাষা শহিদদের রক্তের বুদ্বুদ কৃষ্ণচূড়া ফুল হয়ে ফুটেছে। ভাষার জন্য যাঁরা রক্ত দিয়েছেন, তাঁদের ত্যাগের মহিমা যেন মূর্ত হয়ে উঠে থরে থরে ফুটে থাকা লাল কৃষ্ণচূড়ার স্তবকে স্তবকে। তাই বলা যায়, একুশের কৃষ্ণচূড়াকে আমাদের চেতনার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নিতেই কবি কৃষ্ণচূড়া ফুলের প্রসঙ্গ এনেছেন।

গ. উদ্দীপকে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় বর্ণিত ভাষা আন্দোলনের চেতনার বিপরীতে দেশে অশুভ শক্তির বিস্তারের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

আলোচ্য কবিতায় একুশের রক্তঝরা দিনগুলোতে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এদেশের সংগ্রামী মানুষের আত্মাহুতির দিকটি উঠে এসেছে। পরবর্তীতে আন্দোলনই বাঙালিকে জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে একটি স্বাধীন, সুন্দর ও ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলেও এখনো দেশে ঘাতকের অশুভ তৎপরতা চোখে পড়ে বলে কবি মনে করেন।

উদ্দীপকে দেখা যায়, আমজাদ সাহেব প্রতিদিনের মতো পত্রিকার পাতা খুলে শিরোনামগুলো যখন দেখছিলেন, তখন তার চোখে পড়ে তিনটি অপহরণ আর পাঁচটি হত্যার সংবাদ শিরোনাম; যা তাকে মর্মাহত করেছে। তার মনে হয়েছে, যে চেতনাকে সামনে নিয়ে আমরা ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলাম তা আজ ম্লান হয়ে পড়েছে। ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতায়ও দেখা যায়, অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষা আর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হলেও ঘাতকের অশুভ আস্তানা হয়ে উঠছে দেশ। আর এ দিকটি কবির কাছে মনে হয়েছে কৃষ্ণচূড়ার রঙের বিপরীত। উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতার উভয়স্থানে মূলত দেশে চেতনাবিরোধী শক্তির বিকাশের দিকটি উঠে এসেছে।

ঘ. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির উত্থানের দিকটি উঠে এসেছে।

ভাষা আন্দোলনের চেতনা বাঙালির সংগ্রামী চেতনার চিরন্তন বাতিঘর ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সমস্ত আন্দোলন সংগ্রাম আর প্রতিবাদে এই চেতনা বাঙালিকে নিরন্তর প্রেরণা জুগিয়েছে। কিন্তু কিছু স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী লোকের অশুভ তৎপরতায় তা প্রতিনিয়ত স্নান হয়ে পড়ছে। বলে আলোচ্য কবিতায় কবি তাঁর মত প্রকাশ করেছেন।

উদ্দীপকে দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমজাদ সাহেবকে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি প্রতিদিন পত্রিকা পড়ে দেশের খবর রাখেন। পত্রিকার পাতায় তিনি অপহরণ ও হত্যার খবর পড়ে ব্যথিত হওয়ার পাশাপাশি হতাশ। হন। তিনি বাঙালির জাতীয়তাবাদের কথা স্মরণ করেন। তিনি মনে করেন, যে চেতনাকে ধারণ করে বাঙালি ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তা আজ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। উদ্দীপকে আমজাদ সাহেবের যে হতাশা তা ‘ফেব্রুয়ারি কবিতার কবির মধ্যে লক্ষণীয় উভয়ের হতাশার কারণও মোটামুটি এক। উদ্দীপকের আমজাদ সাহেব যেরকম বাংলাদেশ প্রত্যাশা করেছেন, বাস্তবতায় তার দেখা পাচ্ছেন না বলেই তিনি হতাশ। তিনি দেখছেন প্রতিদিন লাশ হয়ে যাচ্ছে মানুষ। খালি হচ্ছে মায়ের বুক; যা ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি। অন্যদিকে, ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার কবিও বাঙালির সংগ্রামী চেতনার বিপরীতে অশুভ শক্তির দৌরাত্ম্যকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তাঁর কাছে মনে হয়েছে দেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। তিনি মনে করেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের অপতৎপরতাই ভাষা আন্দোলন আর ‘৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের অবিনাশী চেতনাকে ম্লান করে দিতে পারে । তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০২

 বারবার ফিরে আসে রক্তাপ্লুত শার্ট
ফিরে আসে থমথমে শহরের প্রকাণ্ড চোয়ালে ।
হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়ে, ঘোরে হাতে হাতে,
ময়দানে ফিরে আসে, ব্যাপক নিসর্গে ফিরে আসে, 
মিছিলে পতাকা হয় বারবার রক্তাপ্লুত শার্ট
 বারবার কল্লোলিত আমাদের শহর ও গ্রাম 
বিষম দামাল দিনগুলি ফিরে আসে বারবার,

ক. শহিদের ঝলকিত….. স্মৃতিগন্ধে ভরপুর।’ শূন্যস্থানে কী হবে?

খ. এখন সে রঙে ছেয়ে গেছে পথ-ঘাট’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকের রক্তাপ্লুত শার্ট ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সঙ্গে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত সংগ্রামী মানুষের আত্মদান ও আত্মাহুতির বিষয়টি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সমগ্র বিষয়কে প্রতিফলিত করতে পারেনি’ – তুমি কি এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দেখাও।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০২ এর উত্তর সমূহ

ক. শহিদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ স্মৃতিগন্ধে ভরপুর।

খ. এখন সে রঙে ছেয়ে গেছে পথ-ঘাট’ বলতে বাঙালির উপর সর্বক্ষেত্রে পাকিস্তানিদের শোষণের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।

দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা ক্ষমতালাভ করে বাঙালির ওপর শোষণ-নিপীড়ন, অন্যায়-অত্যাচার চালাতে থাকে। বাঙালির জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের শোষণের কালো থাবা বিস্তার লাভ করে। উল্লেখিত চরণে সেই বিষয়কেই বোঝানো হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের রক্তাপ্লুত শার্ট ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার ভাষা আন্দোলনের শহিদদের আত্মত্যাগের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি বাংলার দামাল ছেলেদের সংগ্রামী চেতনাকে ধারণ করে আছে। বিশেষ করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের আত্মত্যাগের প্রসঙ্গটিও উঠে এসেছে আমাদের চেতনার রং হিসেবে। ভাষা শহিদদের রক্তকে প্রতীকায়িত করে তোলা হয়েছে থরে থরে সাজানো কৃষ্ণচূড়া ফুলের লাল রঙের মধ্য দিয়ে। উদ্দীপকের কবিতাংশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে দামাল ছেলেদের ভূমিকার দিকটি উঠে এসেছে। ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দাবিতে রাজপথে নেমেছিল এদেশের দামাল ছেলেরা। বাংলার গ্রাম ও শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল প্ল্যাকার্ড হাতে সাহসী তরুণেরা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সেদিনের থমথমে পরিবেশকে কল্লোলিত করেছিল এদেশের ছাত্র-জনতা। তাদের সে মিছিলে গুলি চালিয়ে ঢাকার রাজপথ | রক্তাক্ত করে পাকিস্তানি শাসকরা। রক্তাপ্লুত শার্ট সে কথাই আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। উদ্দীপকের এই রক্তাপ্লুত শার্ট ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ | কবিতার ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাসকেই নির্দেশ করে।

ঘ. ‘উদ্দীপকে উল্লেখিত সংগ্রামী মানুষের আত্মদান ও আত্মাহুতির বিষয়টি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সমগ্র বিষয়কে প্রতিফলিত করতে পারেনি’— মন্তব্যটি যথার্থ বলেই প্রতীয়মান হয় ।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি উনসত্তরের গণআন্দোলনের সংগ্রামী চেতনার কবিতা। এ কবিতায় ভাষা আন্দোলন চেতনা হিসেবে উঠে এসেছে। তবে মূল আলোচ্য বিষয় হলো, ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণআন্দোলন।

উদ্দীপকে ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক ও সংগ্রামী চেতনার প্রতিবিম্ব ফুটে উঠেছে। সেখানে ভাষার দাবীতে সংগ্রামী মানুষ যে আত্মদান ও আত্মাহুতি দিয়েছে তাই প্রকাশ পেয়েছে। রাজপথে দামাল ছেলেদের নিরবতা ভেঙে উত্তাল আন্দোলনের চিত্রই সেখানে দৃশ্যমান। রক্তাপ্লুত শার্ট ভাষা শহিদদের রক্তাক্ত দেহকেই যেন ইঙ্গিত করে। উদ্দীপকের এই বিষয়টি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সমগ্র বিষয় নয়।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি মূলত ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসকদের জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালির বিদ্রোহী চেতনার দলিলস্বরূপ। সেসময় পাকিস্তানের অন্যায়ের বিরুদ্ধে এদেশের সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠেছিল। প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার, কল-কারখানা, স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসংখ্য ছাত্র-জনতা ঢাকার রাজপথে জড়ো হয়েছিল। বিচিত্র শ্রেণি পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার এক অসাধারণ চিত্র ফুটে উঠেছে এ কবিতাটিতে। দেশকে ভালোবেসে মানুষের আত্মদান ও আত্মাহুতির বিষয়টি এখানে ফুটে উঠেছে। মানুষের এই চেতনা যে ঐতিহ্যগত সে বিষয়টি বোঝাতে ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে কবিতায় মূর্ত করা হয়েছে। উদ্দীপকে এই ভাষা আন্দোলনের চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মাত্র, যা কবিতার সামগ্রিক বিষয়কে তুলে ধরতে পারেনি।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০৩

ভাষা আন্দোলন ছিল একটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়। ওই আন্দোলনের ফলে সাম্প্রদায়িক মুসলিম জাতীয়তাবাদকে প্রত্যাখ্যান করে পূর্ব বাংলার মানুষ। ভাষা আন্দোলন ছিল অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা থেকেই পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিষয়টি সামনে আসে। এর ফলে ‘৫৪-র প্রথম সাধারণ নির্বাচনেই মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটে। মওলানা ভাসানী, ফজলুল হক ও শহিদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হয়।

ক. কবি কোন ফুলের রংকে আমাদের চেতনার সাথে তুলনা করেছেন?

খ. সালামের চোখে আজ আলোচিত ঢাকা।’ – কবিতায় ‘আজ আলোচিত ঢাকা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকের বক্তব্যে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? আলোচনা করো।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার মূলভাবের প্রতিনিধিত্ব করে কি? মতামত দাও।

সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০৩ এর উত্তর সমূহ

ক. কবি কৃষ্ণচূড়া ফুলের রংকে আমাদের চেতনার সাথে তুলনা করেছেন। 

খ . আজ আলোচিত ঢাকা’ বলতে সমবেত বাঙালির জনস্রোতকে বোঝানো হয়েছে।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এদেশের আপামর জনতা। তারা এসেছিলেন পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। ঢাকা পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। আবারও একই চিত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটে ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ঢাকায় জড়ো হয়। উল্লিখিত চরণটি দ্বারা ভাষা আন্দোলনের মতো ১৯৬৯-এর গণ আন্দোলনে ঢাকার অবস্থাকেই বোঝানো হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের বক্তব্যে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় প্রকাশিত সংগ্রামী চেতনার দিকটি ফুটে উঠেছে।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত। এ কবিতায় কবি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে সৃষ্ট গণজাগরণ, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের বিষয়টিকে শৈল্পিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করেছেন। শুধু তা-ই নয়, কবিতাটিতে শামসুর রাহমান বিচিত্র শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামের এক অসাধারণ শিল্পভাষ্য রচনা করেছেন।

উদ্দীপকে বাঙালির মননে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ভাষা আন্দোলনের অবিনাশী প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতি সাম্প্রদায়িক পরিচয়কে অস্বীকার করে এবং স্বতন্ত্র একটি জাতিসত্তা হিসেবে অধিকারসচেতন হয়ে ওঠে। ফলে পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষম্য এ দেশের জনতার সামনে প্রকট হয়ে ধরা দেয়। এরই প্রতিবাদ হিসেবে ‘৫৪-এর সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয় ঘটে। একইভাবে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায়ও ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা চেতনাকে কেন্দ্র করে ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলন সংঘটিত হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকের বক্তব্যে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় প্রকাশিত সংগ্রামী চেতনার দিকটিই উঠে এসেছে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার মূলভাবের প্রতিনিধিত্ব করে বলেই আমি মনে করি।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি অন্যায় ও অপশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেছেন। কবিতাটি একুশের রক্তঝরা দিনগুলোতে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এ দেশের সংগ্রামী মানুষের মাহাত্ম্যে প্রগাঢ়তা লাভ করেছে। এখানে পাকিস্তানি অপশাসনের পরিপ্রেক্ষিতে বাঙালির আত্মজাগরণ এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধের কথা গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে।

উদ্দীপকে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উদ্দীপকের বক্তা এ আন্দোলনকে দেখেছেন রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। কেননা, এ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদকে প্রত্যাখ্যান করে এবং একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হিসেবে আত্মপরিচয় লাভ করে। ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিষয়টি তাদের কাছে বড়ো হয়ে ধরা দেয়। এরই ফলস্বরূপ ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয় ঘটে।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ একটি দেশপ্রেম, গণজাগরণ এবং সংগ্রামী চেতনার কবিতা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে যে গণ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, কবিতাটি সে গণজাগরণের প্রেক্ষাপটেই লেখা। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হিসেবে বাঙালি আত্মপরিচয় লাভ করে এবং অধিকারসচেতন হয়ে ওঠে। আর সে জাতীয়তাবাদী চেতনাই তাদের পরবর্তী সকল আন্দোলন-সংগ্রামে উজ্জীবিত করে । উদ্দীপকের বক্তব্যেও বিষয়টি একইভাবে উঠে এসেছে। এদিক থেকে উদ্দীপকটি আলোচ্য কবিতার মূলভাবের প্রতিনিধিত্ব করে।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০৪

ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ দুপুর বেলার অক্ত বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় বরকতেরই রক্ত। হাজার যুগের সূর্যতাপে জ্বলবে এমন লাল যে, সেই লোহিতেই লাল হয়েছে কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে । প্রভাতফেরির মিছিল যাবে ছড়াও ফুলের বন্যা, বিষাদ গীতি গাইছে পথে তিতুমীরের কন্যা।

ক. ‘আমি আর আমার মতোই বহুলোক রাত্রিদিন ভূলুণ্ঠিত – কোথায়?

খ. ‘একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং’- ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার কোন দিকের সমর্থন মেলে? ব্যাখ্যা করো। 

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সমগ্র চেতনাকে ধারণ করেনি” – বিশ্লেষণ করো।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০৪ এর উত্তর সমূহ

ক. আমি আর আমার মতোই বহুলোক রাত্রিদিন ভূলুণ্ঠিত — ঘাতকের – আস্তানায়।’

খ. ‘একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং’— চরণটি দ্বারা ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগের তাৎপর্যকে বোঝানো হয়েছে।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাঙালি জাতি ভাষার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছিল। এ আন্দোলনের সময় ঢাকা শহরে ফুটেছিল রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। টকটকে লাল রঙের এ ফুল কবির কাছে শহিদদের রক্তের রং বলে মনে হয় । এজন্যই কবি একুশের কৃষ্ণচূড়াকে আমাদের চেতনার রং বলে অভিহিত করেছেন।

গ. উদ্দীপকে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের আত্মত্যাগের দিকটির সমর্থন মেলে।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি সংগ্রামী চেতনার কবিতা, দেশপ্রেমের কবিতা, গণজাগরণের কবিতা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন মূলত বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত্তিস্বরূপ। কবির মনে হয়, যেন ভাষা শহিদদের রক্তের বুদবুদই কৃষ্ণচূড়া ফুল হয়ে ফুটেছে। তাই একুশের কৃষ্ণচূড়াকে তিনি আমাদের চেতনার রঙের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ভাষার জন্য যাঁরা রক্ত দিয়েছেন, জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের ত্যাগ আর মহিমা যেন পরবর্তীকালের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে বাঙালিকে প্রেরণা জুগিয়েছে। তাই এ কবিতায় কবি শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও আত্মাহুতি দেওয়া বীর জনতাকে ভাষা শহিদ সালাম ও বরকতের প্রতীকে তাৎপর্যময় করে তুলেছেন।

উদ্দীপকের কবিতাংশে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ ভাষাশহিদদের আত্মত্যাগ আর তাদের বীরত্ব গাথায় ভাস্বর। কবির দৃষ্টিতে ঐ দিনের বৃষ্টি ফোঁটা যেন জল নয়, শহিদদের রক্তের প্রতীক। আর সেই রক্তেই যেন রঞ্জিত হয়ে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার ডাল। প্রভাতফেরির মিছিলে যে ফুলের বন্যা বইছে তা মূলত শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাদের হারানোর বেদনাই যেন ধ্বনিত হচ্ছে সকলের কণ্ঠে। একইভাবে, ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাতেও কবি একুশে ফেব্রুয়ারিতে আত্মদানকারী ভাষাশহিদদের প্রসঙ্গ উপস্থাপন করেছেন, যা উদ্দীপকের কবিতাংশেও প্রতিফলিত হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার ভাষাশহিদদের আত্মত্যাগের দিকটির সমর্থন মেলে।

ঘ. উদ্দীপকটি শুধু ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত, কিন্তু ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানের পটভূমিতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্যকে তুলে ধরা হয়েছে।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় ১৯৬৯-এ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের গণ অভ্যুত্থানের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনের ক্রমধারায় ছাত্র অসন্তোষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন ১৯৬৯-এ ব্যাপক গণ আন্দোলনে রূপ নেয়। শহর ও গ্রামের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন ছিল অপ্রতিরোধ্য।

উদ্দীপকের কবিতাংশে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির পটভূমি তুলে ধরা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ যেন ভাষাশহিদদের স্মৃতিতে মোড়ানো। কবির দৃষ্টিতে ঐদিনের বৃষ্টি তাই শহিদদের রক্তের প্রতীক। তাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েই যেন গাছের ডালে ডালে শোভা পাচ্ছে লাল কৃষ্ণচূড়া। প্রভাতফেরির মিছিলে ফুলের ছড়াছড়ি। সকলের মুখে বিষাদের সুর যেন মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য তাঁদের আত্মদানকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় দেশের জন্য মানুষের আত্মদান ও আত্মাহুতির প্রেরণাকে কবি গভীর মমতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে মূর্ত করে তুলেছেন। এক্ষেত্রে তিনি, ভাষা আন্দোলনের প্রেরণা দ্বারা উজ্জীবিত। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারির রক্তঝরা দিনগুলোতে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এদেশের সংগ্রামী মানুষদের গণ অভ্যুত্থানের মাহাত্ম্যকে তুলে ধরেছেন। শুধুই তাই নয়, কবি এ আন্দোলনে শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও আত্মাহুতি দেওয়া বীর জনতাকেও ভাষাশহিদ সালাম ও বরকতের প্রতীকে তাৎপর্যময় করে তুলেছেন। কিন্তু উদ্দীপকে কেবল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মহিমাই ব্যক্ত হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সমগ্র চেতনাকে ধারণ করেনি ।

সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০৫ এর উত্তর সমূহ

১৯৫২ সালে বাঙালির ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই আসে ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সবশেষে আসে পরম আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। এ হচ্ছে এক ধারাবাহিকতা বা পরম্পরা। যে পরম্পরায় পূর্বসূরিদের আদর্শকে উত্তরসূরিরা ধারণ করে, বহন করে নিয়ে যায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।

ক. শহিদের রক্তের বুদ্বুদ কীসের সাথে তুলনীয়? 

খ. নক্ষত্রের মতো ঝরে অবিরত অবিনাশী বর্ণমালা’ – বলতে কোন অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে?

গ. ‘বুঝি তাই উনিশশো উনসত্তরেও আবার সালাম নামে রাজপথে, শূন্যে তোলে ফ্ল্যাগ’— পক্তিটির মধ্য দিয়ে উদ্দীপকে ফুটে ওঠা দিকটি চিহ্নিত করো।

ঘ. “উদ্দীপকের মূলভাব এবং ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার মূলভাব একসূত্রে গাঁথা।” মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ করো।

সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০৫ এর উত্তর সমূহ

ক. শহিদের রক্তের বুদ্বুদ কৃষ্ণচূড়ার ফুলের সাথে তুলনীয় ।

খ. ‘নক্ষত্রের মতো ঝরে অবিরত অবিনাশী বর্ণমালা’— বলতে ভাষা আন্দোলনের ঘটনাকে বোঝানো হয়েছে।

মাতৃভাষার মান বাঁচাতে রাজপথে নেমে এসেছিল সালাম-বরকতের মতো অসংখ্যা বিপ্লবী মানুষ। সালাম-বরকতের হাতে ছিল মাতৃভাষা প্রেমের নিদর্শন ফ্ল্যাগ বা ব্যানার। ঘাতকের গুলিতে সালাম-বরকত মুখ থুবড়ে পড়ে রাস্তায়, পড়ে যায় সেইসব ব্যানার। তবুও অবিনাশী হয়ে থাকে নক্ষত্রের মতো বাংলা ভাষার বর্ণগুলো— প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।

গ. “বুঝি তাই উনিশশো ঊনসত্তরেও আবার সালাম নামে রাজপথে, শূন্যে তোলে ফ্ল্যাগ’ পঙ্ক্তিটিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঙালির চিরন্তন প্রতিবাদী মনোভাব ফুটে উঠেছে, যা উদ্দীপকেও লক্ষণীয়।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানের কথা বলা হয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে পূর্বসূরিদের প্রতিবাদী আন্দোলনই পরবর্তী প্রতিবাদের প্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছে। উদ্দীপকের বক্তব্যেও এর প্রতিফলন পাওয়া যায়।

উদ্দীপকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রতিবাদ ও জয়লাভের ধারাবাহিক রূপ তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচন ও ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। এ আন্দোলনগুলো পূর্বসূরিদের আদর্শকে উত্তরসূরিদের মাঝে প্রবাহিত করার জ্বলন্ত উদাহরণ। আলোচ্য পঙক্তিটিতে এ দিকটিই ফুটে উঠেছে। ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানে জেগে ওঠা মানুষগুলো যেন ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনের সালামেরই প্রতিচ্ছবি। জাতীয় সংকটে যখনই প্রয়োজন হয় তখনই প্রেরণা জোগায় সালামের আদর্শ। যে আদর্শ প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রতিবাদী হতে শেখায়। এ ভাবটিই উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।

ঘ. “উদ্দীপকের মূলভাব এবং ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার মূলভাব একসূত্রে গাঁথা”— মন্তব্যটি যথার্থ।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ সংগ্রামী চেতনা, দেশপ্রেম ও গণজাগরণের কবিতা। জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ যে বারবার জেগে উঠেছে তারই দলিল এই কবিতা। আলোচ্য উদ্দীপকেও বাঙালির সংগ্রামী চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়।

উদ্দীপকে সময়ের ধারাবাহিকতায় বাঙালির প্রতিবাদী মনোভাব, দেশপ্রেম ও গণজাগরণের কথা বলা হয়েছে। ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭০ ও ১৯৭১ সালের ধারাবাহিক ঘটনাগুলো উক্ত দিকগুলোরই বহিঃপ্রকাশ। আলোচ্য = কবিতায় ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানের কথা বলতে গিয়ে বাঙালির দেশাত্মবোধের আদর্শ, সংগ্রাম ও ত্যাগের দিকটি মূর্ত হয়ে উঠেছে।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি বাঙালির আত্মদান ও আত্মাহুতির প্রেরণাকে মমতা ও শ্রদ্ধার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। একই সাথে ১৯৬৯ এর গণজাগরণের পেছনে ১৯৫২-এর আদর্শ ও চেতনার প্রভাবকেও তাৎপর্যময় করে তুলেছেন তিনি। উদ্দীপকের ঘটনাবর্তেও বীর বাঙালির প্রতিবাদী আদর্শের দিকটি তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঙালির আন্দোলনের আদর্শ যে পূর্বসূরি থেকে উত্তরসূরিতে বহমান তারও উল্লেখ রয়েছে। আবহমানকাল ধরে বাঙালির সংগ্রামী মনোভাব আদর্শ ও চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সঞ্চারিত হয়েছে। জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে এখান থেকে প্রেরণা নিয়েই অগ্রসর হয়েছে জাতি। আর এ দিকটির বর্ণনাসূত্রে উদ্দীপক ও কবিতার মূলভাব এক হয়ে উঠেছে। সেদিক বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত: সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০৬

 ১৯৯০ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার রাস্তায় অংশ নিয়েছিল সাধারণ মানুষ। ওই দিন নূর হোসেন তার বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান লিখে মিছিলের প্রথম সারিতে আত্মাহুতি দিয়েছিল স্বৈরশাসকের গুলিতে। দিনটিকে ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ।

ক. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?

খ. “সেই ফুল আমাদের প্রাণ’ এ উক্তির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকের নূর হোসেন চরিত্রটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সঙ্গে কি সাদৃশ্যপূর্ণ? কীভাবে? আলোচনা করো।

ঘ. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার আলোকে উদ্দীপকের স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’- উক্তিটির স্বরূপ বিশ্লেষণ করো।

 সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০৬ এর উত্তর সমূহ

ক.  ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি গদ্য ছন্দে রচিত।

খ. ‘সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ’ বলতে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে বোঝানো হয়েছে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহিদদের রক্ত ও দুখিনী মায়ের অশ্রুর বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বাংলা ভাষা। সেই বাংলা ভাষা যেন ফুল হয়ে আমাদের চেতনায় ফুটে আছে।

গ. দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দেশের জন্য আত্মাহুতি দেওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের নূর হোসেন চরিত্রটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলার দামাল ছেলেদের সংগ্রামী চেতনার দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে এ দেশের জনসাধারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল, অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। উদ্দীপকের নূর হোসেন এমনই একজন দেশপ্রেমিক।

উদ্দীপকে বাংলার গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য বাঙালির আত্মাহুতির দিকটি ফুটে উঠেছে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে রাস্তায় নেমে প্রাণ দিয়েছিল নূর হোসেন। তার এই আত্মাহুতির পেছনে রয়েছে অকৃত্রিম দেশপ্রেম আর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা যা নূর হোসেনকে দিয়েছিল অনুপ্রেরণা। ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায়ও কবি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আর উনসত্তরের গণ আন্দোলনে বীর বাঙালির পরিচয় তুলে ধরেছেন। মত প্রকাশের অধিকার আর বাঁচার অধিকার আদায়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বাঙালিরা প্রাণ দিয়েছিল অকাতরে। উদ্দীপকের নূর হোসেন চরিত্রটিও সেই একই দেশপ্রেমে উজ্জীবিত দেশপ্রেমিক।

ঘ. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার আলোকে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’— উক্তিটিতে বাঙালির গণতন্ত্রকামী মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি চিত্রিত হয়েছে। নিজেদের অধিকার আদায়ে বাঙালি জাতি সর্বদা সোচ্চার। আকাঙ্ক্ষার পূর্ণতা লাভে অত্যাচারীদের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলে বাঙালিরা।

উদ্দীপকে গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক নূর হোসেনের মহান আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। নিজের জীবনের মায়া না করে দেশের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। গণতন্ত্রের মুক্তির প্রত্যাশায় বুলেটের সামনে বুক পাতে অকুতোভয় নূর হোসেন। আলোচ্য কবিতায়ও দেখা যায়, নূর হোসেনের মতো একই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে নিজেদের অধিকার আদায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার বীর সন্তানরা। অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয় দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য ।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি ১৯৬৯-এ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর – বিরুদ্ধে বাঙালির জাগরণের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এ দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাদের চেতনায় জাগ্রত হয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। কবি এই চেতনার উৎস হিসেবে বিবেচনা করেছেন ৫২’র ভাষা আন্দোলনের শহিদদের। তাদের সংগ্রামী আত্মাহুতি প্রগাঢ়তা লাভ করেছে ১৯৬৯-এর আন্দোলনকারীর মাঝে। উদ্দীপকের আলোচ্য উক্তিটির মাঝেও লুক্কায়িত আছে বাঙালির গণতন্ত্রের প্রত্যাশা। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বাঙালির সংগ্রামী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আত্মত্যাগ করেন নূর হোসেন। তার এই আত্মত্যাগের প্রতিফলন লক্ষ করা যায় আলোচ্য কবিতায় বর্ণিত আত্মত্যাগী বাঙালিদের মাঝে অতএব, আমরা বলতে পারি— ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার আলোকে উদ্দীপকের ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’— উক্তিটির তাৎপর্য গুরুত্বপূর্ণ ।

সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০৭

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। ভেঙে ফেলার সময় পাকিস্তানি সেনারা দম্ভ করে বলেছে, ‘হার ঘর শহিদ মিনার বানা দেঙ্গে।’ অর্থাৎ প্রতিটি ঘরকেই শহিদ মিনার বানিয়ে দেব। হ্যাঁ, তারা প্রায় প্রতিটি ঘরেই কাউকে না কাউকে শহিদ করেছিল । ভেঙে ফেলেছিল দেশের সব শহিদ মিনার। স্বাধীন বাংলাদেশ এর জবাব দিয়েছে। প্রায় প্রতিটি নগর প্রাঙ্গণে, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং একুশে দিবসের আগে আঙিনায় মাঠে শহিদ মিনার বানিয়ে জবাব দিয়েছে, আমাদের প্রতিটি ঘরেই শহিদ, আমাদের প্রতিটি প্রাঙ্গণেই শহিদ মিনার।

ক. ‘হরিৎ উপত্যকা’ অর্থ কী?

খ. ‘১৯৬৯ সালটি বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় কেন?

গ. উদ্দীপকে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার কোন দিকটির প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো। 

ঘ. উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার মূলভাবকে কতখানি প্রতিফলিত করতে পেরেছে? বিশ্লেষণ করো।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার মূলভাব: সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০৭ এর উত্তর সমূহ

ক. ‘হরিৎ উপত্যকা’ শব্দের অর্থ- সবুজ প্রান্তর।

খ. ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পূর্ববঙ্গে গণ আন্দোলনের সূচনা হয় বলে ‘১৯৬৯’ সালটি বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয়।

১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ক্রমধারায় ছাত্র অসন্তোষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন ১৯৬৯ সালে ব্যাপক গণ অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। শহর ও গ্রামের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফা দাবির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন ছিল অপ্রতিরোধ্য। পরবর্তীতে এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৬৯’ সালটি চিরস্মরণীয় ও তাৎপর্যমণ্ডিত।

গ. উদ্দীপকে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় প্রকাশিত ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের অন্যায়-অত্যাচারের দিকটির প্রতিফলন ঘটেছে।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া জাতীয়তাবাদী চেতনার আলোকে ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার প্রসঙ্গ উপস্থাপন করেছেন। পাশাপাশি কবিতাটিতে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের অন্যায় আগ্রাসনের চিত্রও তুলে ধরেছেন তিনি ।

উদ্দীপকে পাকিস্তানি সেনাদের দাম্ভিক আস্ফালনের চিত্র উঠে এসেছে। তারা ভাষাশহিদদের স্মরণে নির্মিত ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ভেঙে ফেলে। শুধু তাই নয়, দম্ভ ভরে তারা এদেশের প্রতিটি ঘরকে শহিদ মিনার বানিয়ে দেওয়ার কথা বলে । এর মধ্য দিয়ে বাঙালিদের প্রতি অদের হীন মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে । “ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায়ও কবি পাকিস্তানি সামরিক জান্তার অন্যায় আগ্রাসনের চিত্র উপস্থাপন করেছেন। তাদের অত্যাচারে সমগ্র দেশ যেন ঘাতকের আস্তানায় পরিণত হয়। সংগত কারণেই উদ্দীপকে উল্লিখিত সেনাদের মনোভাব এবং বাঙালিদের ওপর তাদের হত্যাযজ্ঞ আলোচ্য কবিতায় প্রকাশিত পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায়-অত্যাচারের দিকটিকেই প্রতিফলিত করে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার মূলভাবকে আংশিক প্রতিফলিত করতে পেরেছে।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি দেশপ্রেম, গণজাগরণ ও সংগ্রামী চেতনার কবিতা। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে যে গণ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, কবিতাটি সেই গণজাগরণের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে। কবিতাটিতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের প্রসঙ্গ উঠে এলেও এটিই এ কবিতার একমাত্র বিষয় নয়।

উদ্দীপকে পাকিস্তানি সেনাদের অন্যায়-অত্যাচার এবং বাঙালিদের প্রতি তাদের হীন মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে। বস্তুত, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের খাটো করে দেখত। তারা জোর করে বাঙালিদের অবদমিত করতে চেয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানি সেনারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ভেঙে দেয়। এদেশের প্রতিটি ঘরকে শহিদ মিনার বানিয়ে দেওয়ার কথাটির মধ্য দিয়ে তাদের সেই দাম্ভিক ও আগ্রাসী মনোভাবের পরিচয় মেলে।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি পাকিস্তানি শাসকদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এদেশের বিচিত্র শ্রেণি ও পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার এক অসাধারণ শিল্পভাষ্য রচনা করেছেন। কবিতাটিতে দেশমাতৃকার প্রতি জনতার বিপুল ভালোবাসা সংবর্ধিত হয়েছে। পাশাপাশি দেশকে ভালোবেসে মানুষের আত্মদান ও আত্মাহুতির প্রেরণাকে তিনি গভীর মমতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে মূর্ত করে তুলেছেন। এর মর্মমূলে রয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চেতনা। আলোচ্য কবিতায় ফুটে ওঠা এসকল বিষয় উদ্দীপকে উঠে আসেনি। সেখানে কেবল এ কবিতায় উল্লিখিত পাকিস্তান সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের প্রসঙ্গই উপস্থাপিত হয়েছে। সে উদ্দীপকটি আলোচ্য “কবিতার মূলভাবকে আংশিক প্রতিফলিত করে, সম্পূর্ণ নয়

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০৮

অন্তহীন মিছিলের দেশ,
সারি সারি মানুষের আকারে হলে মূর্তিময়ী
সমস্ত স্বদেশ আজ রাঙা রাজপথে ।
‘দিবালোক হয়ে ফোটে প্রাঞ্জল বিপ্লব
সাত কোটি মুখ হাসে মৃত্যুর রঙিন তীর হাতে নিয়ে । 
শ্রেণিবদ্ধ এই ভিড়ে সকলেই সবার আগে
একবার শত্রুকে শেষ দেখা দেখে নিতে চায়

ক. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি ‘কমল বন’কে কীসের প্রতীকরূপে ব্যবহার করেছেন?

খ. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় ‘ঘাতকের অশুভ আস্তানা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

গ. উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার যে দিকটিকে আলোকপাত করে তা তুলে ধরো।

ঘ. “উদ্দীপক এবং ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতা মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার এক অসাধারণ শিল্প ভাষা” – বিশ্লেষণ করো।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত: সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০৮ এর উত্তর সমূহ

ক. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় মানবিকতা, সুন্দর ও কল্যাণের জগৎ বোঝাতে কবি ‘কমল বন’ প্রতীকটি ব্যবহার করেছেন।

খ. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসনাধীন দেশকে কবি ঘাতকের অশুভ আস্তানা বলেছেন।

১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের মানুষ ফুঁসে ওঠে। লাল কৃষ্ণচূড়ার রঙের মতো বিপ্লব দানা বাঁধে এদেশের জনগণের মনে। কিন্তু তার বিপরীত চিত্রও ছিল। শাসকগোষ্ঠী এদেশের শিল্প-সাহিত্য, শিক্ষা প্রতিটি ক্ষেত্রকে অবরুদ্ধ করে মানুষের ওপর নির্যাতন চালায়। ফলে পুরো দেশ যেন হয়ে ওঠে ঘাতকের অশুভ আস্তানা।

গ. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় গণ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মানুষের সংগ্রামী চেতনা, দেশপ্রেম এবং গণজাগরণের বিষয়টিকে উন্মোচন করা হয়েছে, যার প্রতিফলন আছে আলোচ্য উদ্দীপকে ।

১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ক্রমধারায় ছাত্র অসন্তোষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন ১৯৬৯-এ ব্যাপক গণ অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি এই পটভূমিতে রচিত। জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এদেশের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ১৯৬৯-এ। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার অসাধারণ এক শিল্পভাষ্য রচনা করেছেন কবি শামসুর রাহমান তাঁর এ কবিতায়। 

উদ্দীপকে বিপ্লবী মানুষের সমন্বিত সংগ্রামে দেশ পরিণত হয়েছে অন্তহীন মিছিলের দেশে। স্বদেশের রাঙা রাজপথে ফোটে প্রাঞ্জল বিপ্লব। মৃত্যুর রঙিন তীর নিয়ে সাত কোটি মানুষ হাসে বিপ্লবের পথে পাওয়া বিজয়ের উল্লাসে। সমস্ত মানুষ শ্রেণিবদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করে শত্রুকে শেষ দেখা দেখে নেওয়ার জন্য। বস্তুত কবিতায় যে সংগ্রামী চেতনা, দেশপ্রেম, গণজাগরণের প্রতিফলন আমরা লক্ষ করেছি, উদ্দীপকে সে দিকটিই পুনরায় হয়েছে।

ঘ. কবি শামসুর রাহমান ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার যে অসাধারণ শিল্পভাষ্য রচনা করেছেন— আলোচ্য উদ্দীপকটিতে সেই একই বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি সংগ্রামী চেতনা, দেশপ্রেম, গণজাগরণের কবিতা। এর প্রেক্ষাপটে রয়েছে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন এবং এই চেতনার নিরিখে উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার কথা।

উদ্দীপকে অনুপম শিল্পভাষ্যে শ্রেণিবদ্ধ মানুষের বিপ্লবের দিক উন্মোচন করা হয়েছে। সারি সারি মানুষের মিছিলে স্বদেশ যেন মূর্তিময়ী; দেশের রাঙা রাজপথে ফোটে প্রাঞ্জল বিপ্লব। আর সাত কোটি মানুষ যেন মৃত্যুর তীর নিয়ে অপেক্ষায় আছে শত্ৰুকে শেষ দেখা দেখে নেওয়ার জন্য । রঙিন

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ক্রমধারায় ছাত্র-অসন্তোষকে কেন্দ্র গড়ে ওঠা ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনের পটভূমিকায় রচিত। শহর ও গ্রামের সকল  শ্রেণি-পেশার মানুষ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ, হাটবাজার, কলকারখানার শ্রেণিবদ্ধ মানুষ সেদিন যোগ দেয় বিপ্লবের মিছিলে ঢাকার রাজপথে। শামসুর রাহমান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সেই স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার অসাধারণ এক শিল্পভাষ্য রচনা করেছেন এ কবিতায়। ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতা ও আলোচ্য উদ্দীপক উভয়ক্ষেত্রে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে অসাধারণ শিল্পভাষ্যে। তাই প্রশ্নে উল্লেখিত মন্তব্যটি যথার্থ।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০৯

ছোটো ভাইটি আমার কোথাও দেখি না নরম নোলক পরা বোনটিকে আজ আর কোথাও দেখি না। কেবল পতাকা দেখি, কেবল উৎসব দেখি, স্বাধীনতা দেখি তবে কি আমার ভাই আজ ঐ স্বাধীন পতাকা? তবে কি আমার বোন তিমিরের বেদিতে উৎসব?

ক. শামসুর রাহমানের প্রথম কবিতা কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?

খ. আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া ধরে ধরে শহরের পথে’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

গ. উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার যে দিকটিকে তুলে ধরে তার পরিচয় দাও । ঘ. উদ্দীপকের বক্তব্য ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার খণ্ডাংশ যৌক্তিকতা দেখাও।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর 

সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ০৯ এর উত্তর সমূহ

ক. শামসুর রাহমানের প্রথম কবিতা ‘সাপ্তাহিক সোনার বাংলা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

খ. প্রতি বছরের মতো আবারও কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুলের সমাহার দেখে কবির মনে হয় যেন ভাষা শহিদদের রক্তের বদবুদ কৃষ্ণচূড়া ফুল হয়ে ফুটেছে।

ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২-তে বাঙালি দামাল ছেলেরা মাতৃভাষা বাংলার মান রক্ষার্থে নিজেদের বুকের রক্তে শহরের রাজপথ রঞ্জিত করে। তাদের রক্তদানের ফলেই আমাদের মাতৃভাষা স্বমহিমায় ভাষর হয়ে ওঠে। তাঁদের রক্তের স্পর্শ পেয়েই যেন কৃষ্ণচূড়া ফুল অমন লাল হয়ে ফোটে। তাই কৃষ্ণচূড়া ফুল থরে থরে ফুটতে দেখলেই কবির মনে হয় ভাষাশহিদরা যেন আবার ফুলের মাঝে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছেন ।

গ. উদ্দীপকটিতে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার যে দিকটিকে তুলে ধরে তা হলো সংগ্রামী মানুষের আত্মাহুতির মাহাত্ম্য ।

১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ তথা আজকের বাংলাদেশে যে গণ আন্দোলন সূচিত হয়েছিল, তারই বর্ণনায় ভাস্বর ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি। এখানে বারবার বায়ান্নর ভাষাসৈনিকদের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে মূলত প্রেরণার আধার হিসেবে। মাতৃভাষার জন্য তাঁদের আত্মাহুতি বাঙালিকে নতুন উদ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিপ্লব ও প্রতিবাদে প্রেরণা জোগায় ।

উদ্দীপকের কবি তার ছোটো ভাইকে, নরম নোলক পরা বোনটিকে বাহ্যদৃশ্যে দেখতে না পেলেও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পান। স্বাধীন দেশের পতাকায়, উৎসব-অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার জন্য আত্মাহুতি দেওয়া ভাইবোনকে খুঁজে পান তিনি। একইভাবে ১৯৬৯ সালে কবি বায়ান্নর ভাষাসৈনিকদের পান প্রেরণার উৎস হিসেবে। ভাষাশহিদগণ মাতৃভাষার মান রক্ষার্থে জীবন উৎসর্গ করায় বাঙালির মনে তাঁরা চিরভাস্বর।

ঘ. উদ্দীপকে শহিদদের মাহাত্ম্য আমাদের চেতনায় চিরভাস্বর এই বিষয়টি ছাড়া অন্যান্য বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত বিধায় উদ্দীপকের বক্তব্য ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার খণ্ডাংশ বলা যায় ।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি ১৯৬৯ সালে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালির প্রবল গণ আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত। সেই গণ আন্দোলন যেভাবে বাঙালি জনজীবনে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তার বর্ণনা কবিতায় পাওয়া যায়। বাংলার প্রকৃতিতে কবি এর রেশ দেখতে পেয়েছেন। বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের চিত্রও কবিতায় রয়েছে। এসব বিষয় উদ্দীপকে অনুপস্থিত।

উদ্দীপকে দেখা যায়, ছোটো ভাই ও বোনকে হারিয়ে খুঁজে ফিরছেন কবি। কোথাও তিনি তাদের পাচ্ছেন না। তবে অন্তদৃষ্টিতে যখন তাকান, তখন দেশের জন্য আত্মাহুতি দানকারী ভাইবোনকে স্বাধীন দেশের পতাকা, উৎসব অনুষ্ঠান প্রভৃতির মাঝে দেখতে পান। ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় ১৯৬৯ সালে এসেও কবি ‘৫২-এর ভাষাসৈনিক সালাম বকরতের সরব উপস্থিতি টের পান।

মূলত দেশ ও জাতির জন্য আত্মাহুতি দেওয়া মানুষ যে পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে যান না, তার প্রমাণ এ কবিতায় পাওয়া যায়। কিন্তু কবিতায় এই বিশেষ দিকটি ছাড়াও বাঙালির গণজাগরণের প্রাকৃতিক পরিবর্তনের চিত্র পরিলক্ষিত হয়। বাঙালি মিছিল-মিটিং করে। শহরের কৃষ্ণচূড়া ফুলেও তার হাওয়া লাগে। উপর্যুক্ত আলোচনায় দেখা যাচ্ছে, একটি বিশেষ দিক উদ্দীপকে ফুটে উঠলেও তা সম্পূর্ণতার দাবি করতে পারে না। তাই ‘উদ্দীপকের বক্তব্য ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার খণ্ডাংশ— ‘প্রশ্নোক্ত কথাটি যথাযথ।

সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১০

 ডুবে গেছে মানুষের হাতে গড়া অসংখ্য সংসার। ডুবে গেছে থালা, ঘটি, বাটি, মাটির পুতুল, খেলনা, বাঁশি; আর ডুবেছে দুর্বিনীত মানচিত্র। পৃথিবীর এই প্রান্তে সবই ডোবে, শুধু ডোবে না জীবন। ডুবে যাওয়া রক্ত পলাশের ডাল থেকে এই মাত্র উড়ে গেল যে পাখিটি নাম তার স্বাধীনতা। জীবনতরি হেলে দুলে ওঠে। জাগে মানুষ, দেখা দেয় সূর্য পুনর্বার স্বাধীনতার।

ক. কী তছনছ হচ্ছে?

খ. একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং’- ব্যাখ্যা করো

গ. উদ্দীপকের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের সাথে ‘ফেব্রুয়ারি   ১৯৬৯’ কবিতার সাদৃশ্য কোথায়? আলোচনা করো। 

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতা সমাজ-বাস্তবতারই ধারক-বাহক”— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১০ এর উত্তর সমূহ

ক. চতুর্দিকে মানবিক বাগান আর কমলবন তছনছ হচ্ছে।

খ. একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং’- চরণটি দ্বারা ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগের তাৎপর্যকে বোঝানো হয়েছে।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাঙালি জাতি ভাষার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছিল। এ আন্দোলনের সময় ঢাকা শহরে ফুটেছিল রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। টকটকে লাল রঙের এ ফুল কবির কাছে শহিদদের রক্তের রং বলে মনে হয় । এজন্যই কবি একুশের কৃষ্ণচূড়াকে আমাদের চেতনার রং বলে অভিহিত করেছেন।

গ. উদ্দীপকের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের সাথে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সাদৃশ্য মানুষের জীবনের বিনিময়ে অর্জন করা স্বাধীনতার মাহাত্ম্যে।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতা ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের চেতনায় ১৯৬৯-এর গণ আন্দোলনের বিপন্ন জীবনের বিনিময়ে প্রাপ্ত তরুণ শ্যামল বাংলার কথা বলে । বাংলার মানুষের রঙিন জীবন, পথঘাট, সকাল-সন্ধ্যার প্রাত্যহিকতা অশুভ আস্তানা হয়েছিল ১৯৫২তে। আবার মানুষের মানবিক বাগান, কমলবন তছনছ হয়েছিল ১৯৫২তে। একই ভূলুণ্ঠন ও ঘাতকের নৃশংসতা দেখা যায় ১৯৬৯ এর সময়ও। কিন্তু সেই জীবন ঠিকই আত্মাহুতির বিনিময়ে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়েছে আমাদের।

উদ্দীপক আমাদের ১৯৫২ ও ১৯৬৯ এর বিপন্ন জীবনের বিনিময়ে প্রাপ্ত স্বাধীনতার সূর্যই দেখায়। ভাষা আন্দোলন ও গণ আন্দোলনে বাংলায় ছিল রক্তঝরা দিন। কিন্তু বিনিময়ে আমরা পেয়েছি ঘাতকের নাগপাশ ছিন্ন এই শ্যামল তরুণ বাংলা। শত্রুর শোষণ ও নিপীড়নে উদ্দীপকের মানুষগুলোর বিপন্ন জীবনের দেখা মিলেছে ১৯৫২ ও ১৯৬৯ তে। কিন্তু সেই জীবনের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি ১৯৫২ তে বাংলা ভাষার অধিকার, সেই চেতনাকে কবি কৃষ্ণচূড়া ফুল হয়ে ফুটতে দেখেন। আবার উদ্দীপকে যে স্বাধীনতা রক্ত পলাশের ডালে পাখি হয়ে উড়ে যায়, তা যেন আলোচ্য কবিতার দুঃখিনী মায়ের হৃদয়ের হরিৎ উপত্যকার ফুল। বিপন্ন জীবনের বিনিময়ে প্রাপ্ত এই আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার সূর্যই উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতাকে সাদৃশ্য দিয়েছে।

ঘ. শত্রুর আঘাতে বিধ্বস্ত বাংলার স্বাধীন জীবনের মাহাত্ম্য বর্ণনার সূত্রে উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতা সমাজ বাস্তবতারই ধারক-বাহক।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৬৯ এর গণ আন্দোলনের সমাজ বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরেছেন। সেই রক্তঝরা দিনগুলোতে বাঙালি ও বাংলা কীভাবে বিপন্ন হয়েছে তাই আলোচ্য কবিতার প্রতিপাদ্য। কিন্তু সেই বিপন্ন জীবন আমাদের প্রাণে ফুল ফুটিয়ে গিয়েছে— এটাও বাস্তবাতারই অংশ।

উদ্দীপক দুর্বিনীত সেই মানচিত্রের কথা বলে যেখানে বিপন্ন সমাজ ও সংসার। উদ্দীপকের ডুবে যাওয়া ঘটি, বাটি, মাটির পুতুল, খেলনা, বাঁশি যেন ১৯৫২ ও ১৯৬৯ এর আত্মাহুতিরই বাস্তব চিত্র। উদ্দীপকের বিপন্ন জীবন ‘৫২ ও ‘৬৯ এর প্রাত্যহিকতায় চলে আসা শত্রুর সন্ত্রাসের চিত্রই উপস্থাপন করে । কিন্তু স্বাধীনতা এমনই যা মানুষের গণজাগরণে জেগে ওঠে বারবার।

আলোচ্য কবিতা ১৯৬৯-এর জেগে ওঠা বীর জনতা ভাষাশহিদ সালাম, বকরতের চেতনার কথা বলেছে। এই চেতনা নক্ষত্রের মতো আলো দিয়ে জাগ্রত জনসাধারণকে এনেছে রাজপথে। তার ফলে আনন্দের রৌদ্রে আর দুঃখের ছায়ায় প্রাণে ফুটে ফুল। উদ্দীপকে বিপন্ন জীবনের জাগরণে স্বাধীনতার জাগ্রত রূপকে উপস্থাপন করে। এই জাগরণ ও স্বাধীনতার মাহাত্ম্য বিপন্ন জীবনের বিনিময়ে প্রাপ্ত হলেও তা সূর্যের মতোই চির অমলিন উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতার বিশ্লেষণে। যথার্থই প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতা সমাজ বাস্তবতারই ধারক-বাহক।

আশাকরি আজকের ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পড়ার পর জানতে পেরেছেন ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতায় কৃষ্ণচূড়া কিসের প্রতীক। আরো জানতে পেরেছেন ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত জানার পর উপকৃত হয়েছেন। ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button