অপরাধরংপুরসারাদেশ

পঞ্চগড়ে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কার্ড দিতে অনিয়মের অভিযোগ 

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় সুবিধা ভোগী প্রত্যেক অসহায় মানুষের কাছ থেকে জন প্রতি ২০০/২২০ টাকা করে নেওয়া হয়।

 

ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সরেজমিনে সুবিধা ভোগীদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আমরা অসহায় মানুষ। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ডিলারের মাধ্যমে প্রতি কেজি চাল ১৫ টাকা করে তিন মাস পর পর ৩০ কেজি করে চাল দেয়। এর আগে কার্ডের লেখা শেষ হওয়ায় সোলায়মান আলী নামের এক ডিলার নতুন কার্ড করে দিবে মর্মে জন প্রতি ৫০/১০০ টাকা করে কিছু লোকের কাছ থেকে নেয়। পরে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার খবর পেয়ে সোলায়মান আলী’কে ৬০/৬৫ হাজার টাকা জরিমানা ও যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল তাঁতের টাকা ফেরত করায়। আজকে নতুন কার্ড দিতে ইউনিয়ন পরিষদ আমাদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ বাবদ ২০০ টাকা এবং অনলাইন খরচ বাবদ ২০ টাকা করে নিচ্ছে।

 

এ সময় একজন প্রতিবন্ধী বলেন, আমার বাসায় একটা ছোট মেয়ে আছে, বাবা-মা আছে। আমি কোন কাজ করতে পারি না। মানুষের কাছে চেয়ে খাই। আমার কাছে ২০০ টাকা চাচ্ছে। আমি টাকা কথায় পাবো। পরে তাকে গণমাধ্যম কর্মীদের পক্ষ থেকে ২০০ টাকা দেওয়া হলে তিনি কার্ড পান। পরে তাকে বাজার খরচের জন্য আরো ৩০০ টাকা দেওয়া হলে তিনি আনন্দে বাড়ি যান।

 

এ সময় আরেক প্রতিবন্ধী গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা নিয়ে জমা দিয়ে কার্ড নিতে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানান ইউনিয়ন পরিষদ কতৃপক্ষ। এ সময় কার্ড বিতরণের দ্বায়িত্বে থাকা দুজন গ্রাম পুলিশ সদস্য ও ১জন মাস্টাররোলে চাকুরি করা ব্যক্তি জানান, এটা সার্ভিস চার্জ। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন সেবা পেতে হলে সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। এ সময় মাস্টাররোলে চাকুরি করা মোঃ মোতালেব হোসেনকে প্রশ্ন করা হয়, আপনাদের টাকা নিতে কে বলেছিল ? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি প্রথমে বলেন আমার বউ বলেছে। পরে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের কথা।

 

এ বিষয়ে কার্ডে সিল থাকা সাবেক তেঁতুলিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জহুরুল ইসলাম বলেন, এই কার্ডে কেউ কোন টাকা নিতে পারবে না। যদি তিনি বাড়ির ট্যাক্স নেন তাহলে এখন কেন ? পুরো ইউনিয়নে মাইকিং করে সবার কাছ থেকে একসাথে নিবে। কার্ড নিতে আসা অসহায় লোকজনকে জিম্মী করে ট্যাক্স আদায় করা হলে আমি তার সাথে একমত নই। এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, কি কারনে টাকা নেওয়া হচ্ছে তা জেনে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমি এখনি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান এর সাথে যোগাযোগ করছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ জহুরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

 

তবে স্থানীয়রা বলেন, এই টাকা গ্রহণের পেছনে অনেকেই জরিত। ডিলার সোলায়মান আলী নতুন কার্ড দিবে মর্মে সামান্য টাকা নেওয়ায় তাকা ফেরত সহ জরিমানা আদায় করা হয়। এখনো ঐ নির্বাহী অফিসার দ্বায়িত্বে আছেন অথচ কার্ড বাবদ সোলায়মান আলীর চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া হলেও চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না। যদি বাড়ি বা অন্য কোন ট্যাক্স বাবদ টাকা নেওয়া হয় তবে এখন কেন। আমাদের সুবিধা মত টাকা যোগার করে আমরা পরিশোধ করতাম। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এই টাকা নেওয়া হচ্ছে মর্মে ধারনা অনেকের। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সর্বসাধারণের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button