কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে কৃষির বিনাশ
পঞ্চগড় জেলা দেবীগঞ্জ উপজেলায় উর্বর দুই/তিন ফসলি জমির টপ সয়েল (জমির উপরের অংশ) কাটার ধুম পড়েছে। দেবীগঞ্জ উপজেলা থেকে মাটি লুটের কারণ অবৈধ ভাবে ইটভাটায় মাটি সংগ্রহ। এসব ভাটায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি দিয়ে ইট বানানো হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছর এই মাটি ব্যবসায়ী চক্রের হাতে শতাধিক বিঘা ফসলি খালে পরিণত হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লোভ দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি শতক জমি ব্যবসায়ীরা কেনেন ২০০০ থেকে ৫০০০ হাজার টাকায়। এই জমি ১.৬ থেকে ৩ ফুট গভীর করে মাটি কাটার চুক্তি করা হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পঞ্চগড় জেলা দেবীগঞ্জ উপজেলার। ১০ নং চেংঠী হাজেরা ডাংগা ইউনিয়ন, ৮ নং দন্ডপাল ইউনিয়ন, পামুলি ইউনিয়ন, ৯ নং দেবীডুবা ইউনিয়ন ৫ নং সুন্দরদীঘি ইউনিয়ন, ৬ নং সোনাহার ইউনিয়নের, বিভিন্ন গ্রামে দুই বা তিন ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। ট্রাক্টর গাড়িতে এসব মাটি পরিবহনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট। গাড়ি গুলো রাস্তায় হাই স্পিড গতিতে চলাচলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে। ধুলো বালি সহ নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে এসব রাস্তা দিয়ে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফসলি জমির উপরিভাগের ১০-১৫ ইঞ্চির মধ্যে উর্বরতা শক্তি থাকে। তাই এসব মাটি খুঁড়ে বিক্রি করার ফলে তা পুনরায় ফিরে আসতে ২৫-৩০ বছর সময় লাগে। আর বারবার তা খোঁড়া হলে এসব জমি ফসল উৎপাদনে স্থায়ীভাবে একেবারে অক্ষম হয়ে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু দপ্তরে কর্মকরতা, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় কিছু মাটি ব্যবসায়ী প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত মাটির ব্যবসা করেন। তারা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির এক থেকে দেড় ফুট মাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে ইটভাটায় বিক্রি করেন। এছাড়া বাড়ি তৈরিতে মাটি ভরাট প্রয়োজন হলেও অনেকে এসব মাটি ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হন। অল্প সময়েই মাটি ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা রোজগার করেন।
দেবীগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অন্তত ৩০ জন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব এলাকার কৃষিজমি থেকে বছরের পর বছর মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভাটা মালিকেরা নানা প্রলোভনে কৃষি জমি পুকুরে পরিণত করেছেন। পাশের জমির মাটি কেটে খাদে পরিণত করায় অন্য জমিওয়ালা কৃষি জমির মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এসব জমিতে মাছ চাষও হচ্ছে না পতিত জমি হয়ে যাচ্ছে। এই জায়গার কোনো মূল্যই নেই। কৃষক এখনো আমাদের প্রাণ। বিকল্প ইটভাটা ও ইটের ব্যবস্থা করতে হবে। ভাটার কারণে মানুষের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ব্যাপকভাবে। কয়লা পোড়া গন্ধ প্রতিনিয়ত মানুষকে পোড়াচ্ছে”। গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি)
দুপুরবেলা দেবীগঞ্জ উপজেলার ৫ নং সুন্দরদিঘী ইউনিয়নে ঢাকাইয়া পাড়ায় অবৈধভাবে কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রি করার অভিযোগ এনে অভিযান পরিচালনা করেন দেবীগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) এক্সিকিউটিভ ম্যাজিসেট্রট- গোলাম রব্বানি সরদার। এমন কি ২ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ৩ জনকে ১ মাসের করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন তিনি। এর মধ্যে একজন প্রতিবন্ধি। তার ঐ জমির সাথে কোন সম্পৃত্বতা নেই বলে জানা গেছে। উক্ত বিষয়ের পর সরজমিনে ঘুরে দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রসাশনকে, অবৈধ ভাবে ফসলি জমির মাটি বিক্রির কয়েকটি তথ্য ফুটেজ সহ স্থানের খবর দিলেও ব্যাবস্থা নেওয়ার কথা বললেও কোনো ব্যাবস্তা গ্রহণ করেনি দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।
কিছু তথ্যর মধ্যে গত (২৯- জানুয়ারি) ২০২৩ইং রবিবার, উপজেলার কালিগঞ্জ দন্ডপাল ইউনিয়নের জুয়েল চৌধুরী কে এস বি, ইটভাটার পুর্বপার্শে আনুমানিক ৩ থেকে ৪ একরের ও বেশি কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে প্রায় ২. থেকে ৩ ফুট গভীর করা হয়েছে। কোথাও এর চেয়ে বেশি গভীর করে মাটি তোলা হচ্ছে যার ভিডিও ফুটেজ দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)’কে দেওয়া হয় এবং মুঠোফোনে অবহিত করা হয় ।
তার আগ (২৭-জানুয়ারি)২০২৩ ইং, তারিখে পামুলি ৪ নাম্বার ওয়াড বৈরাগি পাড়া পশ্চিমে। আনুমানিক ১২থেকে ১৪ একরের ও বেশি কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে প্রায় ২. থেকে ৩ ফুট গভীর করা হয়েছে। কোথাও এর চেয়ে বেশি গভীর করে মাটি তোলা হচ্ছে জানানো হয়। তার আগে (২৩- জানুয়ারি) ২০২৩ইং তারিখে সোনাহার ইউনিয়ন বাজারের পুর্ব পার্শে সরকারি লিস নেওয়া আনুমানিক ৭ থেকে ৮ একর পুকুরের মাটি কেটে ভাটায় নেওয়া হচ্ছে তা জানানো হয় । যেখানে ৪ থেকে ৫ ফিটেরও বেশী গভীরতা করে মাটি বিক্রি করে ভাঁটায়। ১৯/০১/২০২৩ইং তারিখে দেবীডুবা মহল্দার পাড়া কৃষি জমিকে খনন করে পুকুরে পরিনত করা হয় এবং বিভিন্ন জমি থেকে গর্ত করে মাটি নিয়ে যায় ।
এ বিষয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস এর সাথে মুঠো ফোনে কথা বললে তিনি জানান, আমরা ব্যাবস্থা গ্রহণ করছি।
এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ ফজলে রাব্বী, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পঞ্চগড় বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।