রংপুরসারাদেশ

কষ্টে আছে শিলপাটা ধার করার কারিগররা

পাভেল মিয়া ,কুড়িগ্রাম সংবাদদাতাঃ
অনেক আগে অভাবের সংসারে একটু সুখ আনতে অনেকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন শিলপাটা ধার করার কাজ। বাপ-দাদার পেশাকে মায়া হিসেবে ছাড়তে পারেননি, আঁকড়ে ধরে আছেন আজও। তাইতো পেশার টানে ছুটে চলেছেন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। শিলপাটা ধার করার কারিগররা স্থানীয় বাজারে একটি ভাড়াটিয়া বাসায় থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিলপাটা ধার করার কাজ করেন।
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়ন গ্রামের জানাল হক (৬০)। স্ত্রী ও এক ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে ৪ জনের অভাবের সংসার। সংসারের অভাব ঘুচাতে ও জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন শিলপাটায় ধার দেয়ার কাজ। তিনি প্রায় দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিলপাটা ধার দেয়ার কাজ করেন। নিজের মনের মাধুরী দিয়ে শিলপাটায় ফুটিয়ে তোলেন বিভিন্ন নকশা। এতে যা আয় আসে তা দিয়েই চলে তার সংসার।
প্রতিদিন সকালে কাজের সন্ধানে বের হন বিভিন্ন এলাকায়। বিভিন্ন ভঙ্গিতে তারা ডাকতে থাকেন। শিলপাটা ধার লাগবোনি, শিলপাটা ধার দেই–। তাদের এই লম্বা হাঁকডাকে ছুটে আসেন গৃহিণীরা। কাঁধে থাকে একটি টিনের বাক্স বা চটের ব্যাগ। এই ব্যাগের ভেতর থাকে চশমা, হাতুড়ি, লোহার তৈরি এক ধরণের বিশেষ লম্বা যন্ত্র। পাটার উপর যন্ত্র রেখে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করার ফলে পাথরের উপর ছোট ছোট ছিদ্র হয়। কপাল বেয়ে ঘামের ফোঁটা অনবরত ঝরে পড়লেও পেটের ক্ষুধা তো আর থেমে থাকে না। এভাবেই ধার করা হয়ে গেলে পুনরায় মসলা বাটার উপযুক্ত হয়।
মানুষের মুখরোচক খাবার তৈরিতে গ্রামাঞ্চলে জীবনমানের রুচির পরিবর্তন ঘটাতে কাজ করে যাচ্ছেন শিলপাটার ধার কারিগররা। বাস্তবে শিলপাটাতে খোদাই করে ফুটিয়ে তোলেন বিভিন্ন মাছ, ফুল-ফল ও প্রাণির চিত্র। অনেকেই তাদেরকে মজুরির সাথে বকশিশ প্রদান করেন।
এ বিষয়ে কথা হয় সবুর আলীর সাথে। তিনি বলেন, নতুন নতুন প্রযুক্তির কাছে নানা ধরনের হাতের কারিগররা অসহায় হয়ে পড়েছে বিশেষ করে শিলপাটা ধার দেওয়ার কাজ এখন আর আগের মত নেই। বয়স হয়ে গেছে মায়ার টানে ছাড়তে পারিনা।শিলপাটা ধার দেওয়ার দৃশ্য মুগ্ধ হয়ে দেখছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।
শিল ও পাটাতে বাটাল-ছেনি দিয়ে ছোট্ট একটি হাতুড়ির সাহায্যে ঠুকে ঠুকে ধার কাটছেন তিনি। পাটাতে তাদের দক্ষতা আর গৃহস্থের ইচ্ছা অনুযায়ী ধার কেটে কেটে দক্ষ চিত্রশিল্পীর মতো মনের মাধুরী দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন মাছ, ফুল, লতা ও পাখির ছবি।
স্থানীয় গৃহবধূ নুর লাভলী আক্তার , জান্নাতি আক্তার, নয়নতারা, পারভিন বেগমসহ অনেকে জানান, মসলা বাটার জন্য যে জিনিসটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে পাটা আর শিল।
প্রতি তিন থেকে চার মাস পরপর শিলপাটা কাটাতে হয়। নাহলে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, হলুদ, আদাসহ মুখরোচক বিভিন্ন মসলা পিষতে কষ্টকর হয়। তাই আমরা শিলপাটা ধার করাচ্ছি।
গ্রামে কিংবা শহরে ঈদ, বিয়ে, বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে শিল পাটা একটি প্রয়োজনীয় উপকরণ।
মসলা পিষা ছাড়াও ঈদের সময় মেহেদী, বিয়েতে কাঁচা হলুদ ইত্যাদি পিষে নিতে শিল পাটা চাই-ই চাই। এ সমস্ত অনুষ্ঠানের আগেই বাড়ির নারীরা এগুলো ধার করিয়ে রাখতেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button